Precise – সারমর্ম – Bengali – WBPSC Miscellaneous Main Question Paper
Contents
Precise – সারমর্ম – Bengali – Miscellaneous Main
Miscellaneous Main Question – 2019
১ । নীচের গদ্যাংশটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় সংক্ষেপে (সর্বোরকৃত নির্দিষ্ট কাগজে) লিখুন : 40
এক বৃদ্ধ কৃষকের সম্বন্ধে একটি সুন্দর গল্প আছে । তাহার মৃত্যুকাল উপস্থিত দেখিয়া সে তাহার অলস পুত্রদের একটি গোপনীয় কথা বলিয়া যাইবার জন্য তাহার শয্যার পার্শ্বে ডাকিয়া বলিল — “পুত্রগণ ! আমি যে শস্যক্ষেত্রটি তোমাদের জন্য রাখিয়া যাইতেছি, তাহাতে প্রচুর গুপ্তধন আছে ।” — এই কথাগুলি বলা শেষ হইলে বৃদ্ধের প্রায় শ্বাসরোধ হইয়া আসিল । তাহার পুত্ররা সমস্বরে বলিয়া উঠিল — “শস্যক্ষেত্রের কোন স্থানে উহা আছে ?” বৃদ্ধ বলিল — “খুড়িলেই সেই গুপ্তধন পাইবে ।” এই কথা বলা শেষ হইবামাত্র শ্বাসরোধ হইয়া বৃদ্ধের মৃত্যু হইল । গুপ্তধন ক্ষেত্রের ঠিক কোনখানে আছে, তাহা আর তাহার পুত্ররা জানিতে পারিল না । পিতার মৃত্যুর পর পুত্ররা সমস্ত শস্যক্ষেত্রটি খুঁড়িয়া ফেলিল; কিন্তু কোথাও কোনো গুপ্তধন মিলিল না । তবে খোরাখুড়ির ফলে সেই বৎসর ঐ ক্ষেত্রটিতে প্রচুর ফসল ফলিল । ইহাই সেই পিতৃকথিত গুপ্তধন !
Miscellaneous Main Question – 2018
১। নীচের গদ্যাংশটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় সংক্ষেপে (সর্বোরকৃত নির্দিষ্ট কাগজে)লিখুন :40
আমাদের দেশ প্রধানত পল্লীবাসী । এই পল্লী মাঝে মাঝে যখন আপনার নাড়ীর মধ্যে বাহিরের বৃহৎ জগতের রক্তচলাচল অনুভব করিবার জন্য উৎসুক হইয়া ওঠে , তখন মেলাই তাহার প্রধান উপায় । এই মেলাই আমাদের দেশে বাহিরকে ঘরের মধ্যে আহবান । এই উৎসবে পল্লী আপনার সমস্ত সংকীর্ণতা বিস্মৃত হয় — তাহার হৃদয় খুলিয়া দান করিবার ও গ্রহণ করিবার এই প্রধান উপলক্ষ । যেমন আকাশের জলে জলাশয় পূর্ণ করিবার সময় বরসাগম , তেমনি বিশ্বের ভাবে পল্লীর হৃদয়কে ভরিয়া দিবার উপযুক্ত অবসর মেলা ।
এই মেলা আমাদের দেশে অত্যন্ত স্বাভাবিক । একটা সভা উপলক্ষে যদি দেশের ডাক দাও , তবে তাহারা সংশয় লইয়া আসিবে , তাহাদের মন খুলিতে অনেক দেরি হইবে — কিন্তু মেলা উপলক্ষে যাহারা একত্র হয় তাহারা হৃদয় খুলিয়াই আসে — সুতরাং এইখানেই দেশের মন পাইবার প্রকৃত অবকাশ ঘটে । পল্লীগুলি যেদিন হাল -লাঙল বন্ধ করিয়া ছুটি লইয়াছে , সেইদিনেই তাহাদের কাছে আসিয়া বসিবার দিন।
Miscellaneous Question Paper – 2010
১। নীচের গদ্যাংশটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় সংক্ষেপে (সর্বোরকৃত নির্দিষ্ট কাগজে) লিখুন : 40
সব ছবিরই দুটি দিক থাকে , বলবার কথা আর বলবার ভাষা ; প্রসঙ্গ আর আঙ্গিক । মূল পটুয়া ছবিকে দু’দিক থেকে দেখলেই বোঝা যাবে কেন একে শিল্পসাধনার অনিবার্য অধ্যায় বলতে হবে এবং কীভাবে শিল্পের সত্য এখানে আবিষ্কৃত হয়েছিল ।
পটুয়া শিল্পের বলবার কথাটা কী? নিঃসন্দেহে বিশ্বপ্রকিতির নিঁখুত প্রতিলিপি নয় , অথচ প্রকিতির মূল কথাটুকু নিশ্চিতভাবে উপস্তিত করা । বিশ্বপ্রকিতির সামান্য লক্ষণ যে আবেগ জাগায় , তাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করাই ছিল এ ছবির উদ্দেশ্য। তাই পটের ছবিতে একটা গাছ দেখলে বুঝি যে , ওটা গাছ-ই ; তবু এ-গাছকে অন্য কোনো গাছের সঙ্গে মিলিয়ে নেবার উপায় নেই । অর্থাৎ গাছের সমান্য সংবাদটুকু আছে মাত্র , বিশেষ গাছের গ্লানিটি নেই । এ-দিক থেকে যে কোনো দেশের প্রাগৈতিহাসিক ছবির সঙ্গে মূল পটুয়া ছবির মিল অনেকখানি । অন্যত্র-ও শিল্পীর আবেগ নির্ভর খুঁজেছে বস্তুর সামান্য স্বরুপে । তবু অন্যান্য দেশের প্রাগৈতিহাসিক ছবির সঙ্গে পটুয়া তফাত-ও আছে । মূল পটুয়া ছবির আবেগ দানা বেঁধেছিল একটা পুরাণের উপর । এমনটা আর কোনো দেশের প্রাগৈতিহাসিক চিত্রে হয় না । সেসব চিত্রে হয়তো কোনো নাচের ছন্দ , কোনো মানুষ , কোনো হরিণ আঁকা হয়েছে — কিন্তু খাপছাড়াভাবে, সব মিলে সেটা একটা সম্পূর্ণ জগত নয় । বাংলার প্রাচীন পটুয়ারা কিছু এমন একটা সংহত জগতের সন্ধান পেয়েছিল, যা আগাগোড়া সামান্য-লক্ষণের জগৎ এবং পুরোপুরি পুরাণের উপর যার স্থিতি । সেখানে যে হনুমান , সে তো আর কোনো দৃষ্ট বানার নয় ; তার জন্ম-ইতিহাস বা তার ক্রিয়াকলাপ — কোনটিই মরলকের নয় — তবু বানর ব’লে তাঁকে চিন্তেও ভুল হয় না । পটুয়া শিল্পীদের বিশ্বাস এই জগতেই দানা বেঁধেছিল ।
তাছাড়া , আঙ্গিকের দিক থেকেও প্রাগৈতিহাসিক ছবির সঙ্গে পটুয়া ছবি পার্থক্য ছিল । প্রাগৈতিহাসিক ছবির অঙ্গসজ্জায় পোশকিভাবের কোনো স্পর্শ ছিল না , যা ছিল পটুয়া ছবিতে । এর কারণ , আমাদের দেশে পটুয়া ছবির পাশেই ছিল অভিজাত শিল্প ।
Miscellaneous Question Paper – 2009
১। নীচের গদ্যাংশটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় সংক্ষেপে (সর্বোরকৃত নির্দিষ্ট কাগজে) লিখুন :40
প্রাগৈতিহাসিক যুগেও মানুষ প্রযুক্তির ব্যাবহার করত । নানা রকম পাথুরে যন্ত্রপাতি এবং সাধারণ হাতুড়ি আদিম মানুষের প্রযুক্তি-নৈপুণ্যের পরিচয় এখনও বহন করছে । সভ্যতার অগ্রগতির পথরেখায় মানুষ এইভাবেই প্রস্তর যুগ থেকে ব্রোঞ্জ যুগে এবং ব্রোঞ্জ যুগ থেকে লৌহ যুগে উপনীত হয়েছে । মানুষ চাকর ব্যাবহার জেনেছে এবং বর্তমানে হালকা ধাতু এবং মহাকাশযানের যুগে বাস করছে । সাধারণ হাতুড়ির বদলে স্বয়ংক্রিয় চাপযুক্ত হাতুড়ির ব্যাবহার এবং অবিরাম জটিল কাজের জন্য যন্ত্রের ব্যাবহার জরুরি হয়ে উঠেছে । শক্তির ক্ষেত্রে অবিরাম গবেষণা আমাদের যন্ত্রচালনার ক্ষমতা দিয়েছে । এইসব যন্ত্রের সহায়তায় আমরা স্বয়ংচালিত শিল্পের নতুন যুগে এসে পৌছেছি ।
কিন্তু আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি লাভ করুক না কেন, এই শিল্পবিকাশ আমাদের আদিম যুগের প্রবণতার স্বভাবিক ধারাবাহিকতার পরিণতি মাত্র । কারণ মৌল লক্ষ্য সব ক্ষেত্রেই অভিন্ন । কোথাও অধিক ফসলের জন্য , কোথাও বা আরও গতিবেগ লাভ করার জন্য শিল্পনৈপুণ্য প্রয়োজন । উন্নততর ও সহজতর জীবনযাপনের আকাঙক্ষা সর্বত্রই আজ প্রতক্ষ করা যায় ।
Miscellaneous Question Paper – 2007
৩। নীচের গদ্যাংশটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় সংক্ষেপে লিখুন : ৪০
নিন্দা না থাকিলে পৃথিবীতে জীবনের কী গৌরব থাকিত ? একটি ভালো কাজে হাত দিলাম, তাহার নিন্দা কেহ করে না — সে ভালো কাজের কী দাম ? একটা ভালো কিছু লিখলাম, তাহার নিন্দুক কেহ নাই, কোনো ভালো গ্রন্থের পক্ষে এমন মর্মান্তিক অনাদর আর কী হইতে পারে ? জীবনকে ধর্মচর্চায় উৎসর্গ করিলাম — যদি কোন লোক তাহার মধ্যে গূঢ় মন্দ অভিপ্রায় না দেখিল, তবে সাধুতা যে নিতান্তই সহজ হইয়া পড়িল । মহত্বকে পদে পদে নিন্দার কাঁটা মাড়াইয়া চলিতে হয় । ইহাতে যে হার মানে বীরের সদ্গতি সে লাভ করে না । পৃথিবীতে নিন্দা দোষীকে সংশোধন করিবার জন্য আছে তাহা নয় — মহত্বকে গৌরব দেওয়া তাহার একটা মস্ত কাজ ।
Miscellaneous Question Paper – 2006
৩ । নীচের গদ্যাংশটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় সংক্ষেপে লিখুন : ৪০
ভারতবর্ষ তার দুর্গতিদুর্গে যে রুদ্ধদ্বারে শতাব্দীর পর শতাব্দীর যাপন করেছে — আপনার ধর্মকে সমাজকে, আপনার আচার-ব্যবহারকে কেবলমাত্র আপনার কৃত্তিম গণ্ডির মধ্যে বেষ্টিত করে বসে রয়েছে — সেই দ্বার বাইরের পৃথিবীর প্রবল আঘাতে আজ ভেঙে গেছে । আজ আমরা সকলের কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে, সকলের সঙ্গে আজ আমাদের নানা প্রকার ব্যবহারে আসতে হয়েছে । আজ আমাদের যেখানে চরিত্রের দীনতা, জ্ঞানের সংকীর্ণতা, হৃদয়ের সংকোচ, যেখানে যুক্তিহীন আচারের দ্বারা আমাদের শক্তিপ্রয়োগের পথ পদে পদে বাধাগ্রস্থ হয়ে উঠেছে, যেখানেই লোকব্যবহারে ও দেবতার উপাসনায় মানুষের সঙ্গে মানুষের দুর্ভেদ্য ব্যবধানে আমাদের শতখন্ড করে দিচ্ছে, সেখানেই আমাদের আঘাতের পর আঘাত, লজ্জার পর লজ্জা পেতে হচ্ছে — সেখানেই অকৃতার্থতা বারম্বার আমাদের সমস্ত চেষ্টাকে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে এবং সেখানেই প্রবল-বেগে-চলশীল মানবস্রোতের অভিঘাত সহ্য করতে না পেরে আমরা মুর্ছিত হয়ে পড়ে যাচ্ছি । এই রকম সময়েই যে সকল মহাপুরুষ, আমাদের দেশে মঙ্গলের জয়ধ্বজা বহন করে সামঞ্জস্যকে সমুজজ্বল করে তোলা যাতে করে এখনকার জনসমাজের সেই সাংঘাতিক বিশ্লিষ্টা দূর হবে — যে বিশ্লিষ্টতা এদেশে অন্তরের সঙ্গে বাইরের, আচারের সঙ্গে ধর্মের, জ্ঞানের সঙ্গে ভক্তির, বিচারশক্তির সঙ্গে বিশ্বাসের সঙ্গে মানুষের প্রবল বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আমাদের মানুষ্যত্বকে শতজীর্ণ করে ফেলেছে ।
Miscellaneous Question Paper – 2005
৩। নীচের গদ্যাংশটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় সংক্ষেপে লিখুন : ৪০
দেশ জিনিসটা তো কাহাকেও নিজের শক্তিতে উপার্জন করিয়া আনিতে হয় নাই । আমরা যে পৃথিবীতে এত জায়গা থাকিতে এই বাংলাদেশেই জন্মিতেছি ও মরিতেছে, সে তো আমার নিজগুণ নহে, এবং বাংলাদেশেরও বিশেষ পুণ্যপ্রভাবে এমনও বলিতে পারি না । দেশ পশু-পক্ষী কীটপতঙ্গেরও আছে-কিন্তু স্বদেশে নিজে সৃষ্টি করিতে হয় । সেইজন্যই স্বদেশে কেহ হাত দিতে আসিলে স্বদেশীমাত্রেই উত্কণ্ঠিত হইয়া উঠে, কেন না, সেটা যে বহুকাল হইতে তাহাদের নিজের গড়া-সেখানে যে তাহাদের বহুযুগের আহরিত মধু সমস্ত সঞ্চিত হইয়া আছে । যে সকলে দেশের লোক তাহাদের শরীর মনবাক্যে সমস্ত চেষ্টার দ্বারা জ্ঞানে-প্রেমে-কর্মে স্বদেশকে আপনি গড়িয়া তুলিতেছে, দেশের অন্নবস্ত্র স্বাস্থেজ্ঞানের সমস্ত অভাব আপনি পূরণ করিয়া তুলিতেছে, দেশকে তাহারেই স্বদেশ বলিতে পারে, এবং স্বদেশে জিনিসটা যে কি, তাহাদিগকে বক্তৃতা করিয়া বুঝাইতেও হয় না ; – মৌমাছিকে আপন চকের মর্যাদা বুঝাইবার জন্য বড়ো বড়ো পুঁথির দোহাই পর সম্পূর্ণ অনাব্যশক ।
Miscellaneous Question Paper – 2004
৩। নীচের গদ্যাংশটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় সংক্ষেপে লিখুন : ৪০
কিন্তু আমাকে গোটাকতক কথা বুঝাইয়া দাও । তোমার বাহ্য সম্পদে কয়জন অভদ্র ভদ্র হয়েছে ? কয়জন অশিষ্ট শিষ্ট হইয়াছে ? কয়জন অধার্মিক ধার্মিক হইয়াছে ? কয়জন অপবিত্র হইয়াছে ? একজনও না ? যদি না হইয়া থাকে, তবে তোমরা এই ছাই আমরা চাই না — আমি হুকুম দিতেছি এ ছাই ভারতবর্ষ হইতে উঠাইয়া দাও ।
তোমাদের কথা আমি বুঝি । উদর নামে বৃহৎ গহ্বর, ইহা প্রত্যহ বুজান চাই ; নহিলে নয় । তোমরা বল যে, এই গর্ত যাহাতে সকলেরই ভাল করিয়া বুজে, আমরা সেই চেষ্টায় আছি । আমি বলি, সে মঙ্গলের কথা বটে , কিন্তু উহার মত বাড়াবাড়িতে কাজ নাই । গর্ত বুজাইতে তোমরা এমনই ব্যস্ত হইয়া উটিতেছ যে , আর সকল কথা ভুলিয়া গেলে । বরং গর্তের এক কোণ খালি থাকে, সেও ভাল, তবু আর একদিকে একটু মন দেওয়া উচিত । গর্ত বুজান হইতে মনের সুখ একটা স্বতন্ত্র সমগ্রী ; তাহার বৃদ্ধির কী কোন উপায় হইতে পারে না ? তোমরা এত কল করিতেছ, মনুষ্যে মনুষ্যে প্রণয় বৃদ্ধির জন্য কী একটা কিছু কল হয় না ? একটা বুদ্ধি খাটাইয়া দেখ নহিলে সকল বেকল হইয়া যাইবে ।
Miscellaneous Question Paper – 2003
৩। নীচের গদ্যাংশটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় সংক্ষেপে লিখুন : ৪০
মনের উপর আমাদের বিদ্বেষ এতই সুগভীর যে , যে কাজে তাহার হাত কম দেখা যায় তাহাকেই আমরা সবচেয়ে অধিক প্রশংসা করি । নীতি গ্রন্থেহটকারিতার নিন্দা আছে বটে , কিন্তু প্রকিতপক্ষে তাহাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুরাগ দেখিতে পাই । যে ব্যক্তি অত্যন্ত বিবেচনা পূর্বক অগ্রপশ্চাৎ ভাবিয়া অতি সতর্কভাবে কাজ করে তাহাকে আমরা ভালবাসি না , কিন্তু যে ব্যক্তি সর্বদা নিশ্চিন্ত, অম্লানবদনে বেফাঁস কথা বলিয়া বসে এবং অবলীলাক্রমে বেয়ারা কাজ করিয়া ফেলে , লোকে ঋণের আবশ্যক হইলে তাহার নিকট গমন করে এবং তাহাকে মনে মনে অপরাধী করে , আর যে নির্বোধ নিজের ও পরিবারের ভবিষৎ শুভাশুভ গমনামাত্র না করিয়া যাহা পায় তৎক্ষণাৎ মুক্ত হয়ে ধায় করিয়া বসে , লোকের অগ্রসর হইয়া তাহাকে ঋণদান করে এবং সকল সময় পরিষদের প্রত্যাশা রাখে না । অনেক সময় অবিবেচনা অর্থাৎ মনোবিহীনতাকেই আমরা উদারতা বলি এবং যে মানস্বী হিতাহিত জ্ঞানের অনুদেশক্রমে যুক্তির হাতে লইয়া অত্যন্ত কঠিন , সংকল্পের সহিত নিয়মের চুল চেরা পথ ধরিয়া চলে , তাহাকে লোকে হিসাবী , বিষয়ী সংকীর্ণমনা প্রভৃতি অপরাদসূচক কথা বলিয়া আছে এইটুকু কে ভলাইতে পারে তাহাকেই বলি মনোহর । মনের বোঝাটা অবস্থায় অনুভব করি না সেই অবস্থাকে বলি আনন্দ । নেশা করিয়া বরং পশুরমত হইয়া যাই , নিজের সর্বনাশ করি , সেও স্বীকার তবু কিছুক্ষণের জন্য খনার মধ্যে পড়িয়াও সে উল্লাস সম্বরণ করিতে পারি না । মন যদি (jotharto) আত্মীয়ের মত ব্যবহার করিত, তবে জি এমন উপকারী লোকটার প্রতি এতটা দূর অকৃতজ্ঞতার উদয় হইত ।
Miscellaneous Question Paper – 2002
৩ । নীচের গদ্যাংশটির মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় সংক্ষেপে লিখুন : ৪০
বিদ্যাসাগরের বাহিরটাই ব্রজের মতো কঠিন , ভিতরটা পুষ্পের অপেক্ষাও কোমল । রোদন ব্যাপার বড়োই গর্হিত কর্ম , বিজ্ঞের নিকট ও বিরাগীর নিকট অতীব নিন্দিত । কিন্তু এইখানেই বিদ্যাসাগরের অসাধারণত্ব ; এইখানেই তাঁহার প্রাচ্যত্ব । প্রতিচ্য দেশের কথা বলিতে পারি না , কিন্তু প্রাচ্য দেশের রোদন প্রবণতা মনুষ্য চরিত্রের যেন একটা প্রধান অঙ্গ । বিদ্যাসাগরের অসাধারণত্ব এই যে , তিনি আপনার সুখস্বাচ্ছনদ্যকে তৃণের অপেক্ষা তুচ্ছ গণনা করিতেন । দারিদ্রের দুঃখ দর্শনে তাঁহার হৃদয় টলিত , বান্ধবের মরণ শোকে তাঁহার ধৈর্যচ্যুতি ঘটিত । জ্ঞানের উপদেশ ও বৈরাগ্যের উপদেশ তাঁহার নিকট এ সময় ঘেঁষিতে পারিত না । বিদ্যাসাগর একজন সমাজ সংস্কারক ছিলেন । তিনি নিজেই বলিয়াছেন বিধবা-বিবাহে পথপ্রদর্শন তাঁহার জীবনের সর্বপ্রধান সৎকর্ম । বস্তুত এই বিধবা-বিবাহ ব্যাপারে আমরা ঈশ্বরচন্দ্রের সমগ্র মূর্তিটি দেখিতে পাই । কোমলতা ও কঠোরতা উভয় গুণের আধররূপে তিনি লোক সমক্ষে প্রতীয়মান হয়েন । প্রকৃতির নিষ্ঠুর হস্তে মানব নির্যাতন তাঁর কোমল প্রাণকে দিবানিশি ব্যাথিত রাখিত ; দুর্বল মানুষের প্রতি নিষ্করুণ প্রকৃতির অত্যাচার তাঁহার হৃদয়ের মর্মস্থলে ব্যথা দিত ; তাহার উপর মনুষ্য-বিহিত সমাজ-বিহিত অত্যাচার তাঁহার পক্ষে নিতান্তই অসহ্য হইয়াছিল । বিধাতার কৃপায় মানুষের দুঃখের ত অভাব নেই , তবে কেন মানুষ আবার সাধ করিয়া আপন দুঃখের বোঝার ভার চাপায় ! ইহা তিনি বুঝিতেন না , এবং ইহা তিনি সহিতেনও না । বালবিধবার দুঃখ-দর্শনে তাঁহার হৃদয় বিগলিত হইল ; এবং সেই বিগলিত হৃদয়ের প্রশ্রবণ হইতে করুণামন্দাকিনীর ধারা বহিল । সুরনদী যখন ভুমিপৃষ্ঠে অবতরণ করে , তখন কার সাধ্য যে , সে প্রবাহ রোধ করে ।